সালটা ১৯৯৮।
৩০ সেপ্টেম্বর আসানসোল থেকে পাঁচ বছরের অসুস্থ শৌভিক চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসে। বাবার কাছে আবদার করে সে আর আসানসোলে ফিরে যাবে না, এই শহর কলকাতাতেই থাকবে। ওর বাবা-মা ওকে একা ফেলে রেখে আসানসোলে চলে যায়। হ্যাঁ, তারপর থেকে শৌভিক একাই এখনও এই শহর কলকাতাতেই আছে।
নিশ্চয় আপনার কৌতুহলি মনে প্রশ্ন জাগছে যে শৌভিক কোথায় আছে? কেনইবা আর আসানসোলে ফেরত গেল না? কী রকম বাবা-মা? আরো অনেক অনেক প্রশ্ন।
ব্যাপারটা খোলসা করি।
এস এস কে এম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শৌভিকের চিকিৎসকেরা জানালেন খুব দ্রুত শৌভিকের জন্য রক্ত লাগবে। সেই দিনটা ছিল ২৯ অক্টোবর। শৌভিকের বাবা মনিময়, একজন পরিচিত জুনিয়র ডাক্তারকে সঙ্গে কলকাতার সমস্ত ব্লাড ব্যাঙ্ক ঘুরলেন। সব ব্লাড ব্যাঙ্কের ঝাঁপ বন্ধ। কারণ, তখন বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব চলছে। আনন্দে সবাই মাতোয়ারা। রক্ত পাওয়া গেল না। দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল শৌভিকের হৃদস্পন্দন। না, শোকে বিহ্বল হলেন না মনিময়বাবু। শৌভিকের কলকাতায় থাকার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করলেন পাঁচ বছরে পুত্র শৌভিকের মৃতদেহ দান করার মধ্য দিয়ে। নীলরতন মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগ মনিময়বাবুর উদ্যোগকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে শৌভিকের পাকাপাকি কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা করেন। সত্যি আজও নীলরতন মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে শৌভিক আছে। লেকচার রুমে কাঁচের বাক্সের মধ্যে ওর কঙ্কালটা আছে।
অমানবিকতার বিরুদ্ধে শৌভিক দৃষ্টান্ত হিসেবে আজও বর্তমান।
কত সংগঠন কত জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের স্মরণে রক্তদান শিবির করেন। সেই সব সংগঠনগুলির প্রতি আবেদন 'শৌভিক স্মরণে' রক্তদান শিবিরের আয়োজন করুন। কোন রকম সাহায্যের প্রয়োজন হলে সাথে আছি।